বেবী
সাউয়ের তিনটি কবিতা
অভিসার
কতদিন পরে শহরে জল এল ভিজিয়ে। আমার তখন সমস্ত
খেলনাপাতি অগোছালো। পুবের ঘরের জানলা-কপাট হাট করে খোলা । মৌসুমী গান গাইছেন
উত্তরের বারান্দায়। আনন্দধারা নামছে ধীরে--- আরও ধীরে। হাতভর্তি হলুদের দাগ। খোঁপা
অগোছালো। অথচ সেই কখন থেকে তুমি নৌকো নিয়ে দাঁড়িয়ে আছ সদরের দরজায়। নৌকো ভর্তি
সমুদ্দুর, নীল রঙ।
এদিকে বৃষ্টি কিছুতেই কান্না থামাচ্ছে না। ভেজা মোজা খুলছে না। জুতো ছাড়া ক্যামনে
বেরোই বল!
দীপাবলী
পশ্চিম মেদিনীপুরের শেষ প্রান্তে আমাদের
দেশের বাড়ি। পুকুর ভর্তি জলে, মাঠ ভর্তি ধানে সারাদিন খেলে বেড়াত সূর্য, থইথই আলো। কিন্তু কারেন্ট বিহীন সন্ধের সময় আমাদের ঘর অদ্ভুত লাগত। অদ্ভুত
লাগত আমাদের বেঁচে থাকা, আমাদের উত্সব উঠোনের রঙ্গোলী। আমরা
ভাইবোনেরা দেওয়ালির অবশিষ্ট আলো নিয়ে পড়তে বসতাম। অপেক্ষা করতাম কতক্ষণে মোমবাতি
নিভে যাবে আর ঈশ্বরের চোখ উপেক্ষা করে, পৈশাচিক ভয় তোয়াক্কা
না করে ঘুমিয়ে পড়বো নিশ্চিন্তে আমাদের মায়ের বুকে।
দুর্গা
দুর্গাপ্রতিমা দেখতে দেখতে একটা ভাব কাজ করে।
ওই সোনার মুকুট,
তৃতীয় নয়ন, হাতভর্তি ঝলসে পড়া রূপ লাবণ্য। ইয়া
বড় একটা ত্রিশূল নিয়ে, মনেমনে, এদিক
ওদিক ঘুরে বেড়াই। ঝনঝন শব্দে বাতাস আকাশ কাঁপে। মা- বাবা ভীত সন্ত্রস্ত। ভাই গদগদ
ভাব।
বেনারসী সামলাতে গিয়ে যেই
না হোঁচট খেয়েছি সামান্য,
দেখি অ্যালুমিনিয়ামের ত্রিশূল সোজা তোমার বুকের বাঁ-পাশে। আর তুমি
এই ক্ষতের মাশুল গুণতে গুণতে সে-ই যে বলছ 'দেহিপদপল্লবমুদরং'---
আলতা ছাপে আমি কেমন মা হয়ে উঠছি দ্যাখো!
চিত্রঋণ যামিনি রায়
No comments:
Post a Comment