।। বাক্‌ ১১৮ ।। রাণা বসু ।।



আপনি যখন কল্পনা


আপনাকে যখন কল্পনা করতে বলা হয়েছে, আপনি পিছিয়ে থাকবেন কেন! একজন বললেন, অর্ধেক জল দিয়ে একটা গ্লাস ভরে রাখলে সেটাকে অর্ধেক খালি ভাবতে পারেন। আপনি একটু এগিয়ে ভাবলেন, একটা খালি গ্লাস থাকলে তো সেটা বায়ুপূর্ণ ভাবা যায়।
আরো এগিয়ে যান, ভাবুন, গ্লাসটা ভেঙে ফেলুন।
প্রত্যেকটা টুকরোর মধ্যে আলাদা আলাদা জিনিস কল্পনা করুন।
ভাবুন, টুকরোগুলোর কিছু কাচের, কিছু প্লাস্টিক আর কিছু স্টিলের। জলকে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনে আলাদা করে দিন।
 
এবার জাগলিং করুন।
চেয়ারের ওপর থেকে কাউকে একটা সরিয়ে নিন, তাকে বসিয়ে দিন শিশিরের পাশে। গ্লাসটির কোনো দুটো টুকরোর ফাঁক থেকে অক্সিজেনের একটা অণু নিয়ে পকেটে ভরে রাখুন। এরকম বেশ কয়েকবার করলে জমে যাওয়া অক্সিজেন দিয়ে আপনি আগুন নেভাতে সক্ষম হবেন।
আগুনে পুড়ে যাওয়া অক্ষর শব্দ বাক্য অনুচ্ছেদ গুলো নিজের ও আশেপাশের বিভিন্ন বাড়ির ভেতর ও বাইরের দেয়ালে চিপকে দিন।
তাহলে রিস্ক আপনাকে ছেড়ে চলে যাবে।
আপনি রিস্কি হয়ে যাবেন।
 
রিস্কি মানুষজন রিস্ক নিতে ভয় পান না। বরং তারা নিজেদের স্পাইডারম্যান বলে চেনেন।
চিনে নেন প্রয়োজন আর অপরিহার্য কি কোনটা কেন ইত্যাদি।
এরপর একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনি দেখলেন চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে। সেটা কি কিছুতেই আপনার মাথায় আসছে না।
 
আপনি ভাবা শুরু করলেন পা থেকে। দেখলেন ছড়িয়ে থাকাগুলো শুধুই ছড়িয়ে রয়েছে।গুছিয়ে নেই। আরো দেখলেন, ঘুম থেকে আপনি ওঠেননি, ঘুম আপনার পাশে শুয়ে রয়েছে লম্বা পাশবালিশ হয়ে। আপনি এতক্ষন চাদর ভেবে একটা একঘেয়ে খাদের সুরের ওপর শুয়ে ছিলেন। গান আপনার প্লাস মাইনাস এক কিলোমিটারে কোনোদিন ছিলই না, কিন্তু আপনি আজ অনুভব করলেন সুরের আরোপ আপনার বিছানায়, আপনার বিছানার ওপর কিন্তু আপনার নীচে।
এই প্রথম গানকে আপনার শরীরের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে হল আপনার। আপনি চেঁচিয়ে উঠলেন, গলা দিয়ে যাই বেরোক, আপনার কান শুনল আপনি গাইছেন সেই গান, যা গেয়ে একদিন পৃথিবীতে ফসল ফলেছিল। চরম মিথ্যেগুলো আমরা সত্যি বলে শিখেছিলাম। ঘাসকে আমরা ঘাস ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে শিখিনি। ছবিকে ছবি বলতে শেখার অনেক পর আমরা প্রশ্ন করেছিলাম, এটাকে ছবিই বলে কেন! কেন একই উচ্চারনে দুই বা ততোধিক শব্দ তৈরী করেছি আমরা! চাইলেই তো অন্য কিছু করতে পারতাম। গান গাইতে না পারলেও শরীরের ভাঁজ দিয়ে গানে সুরারোপ করতে, ছবি দিয়ে সঙ্গম করতে, চোখ বন্ধ করে উপভোগ করে নিতে পারতাম নাড়ির সঙ্গে নারীপুরুষের কি নিবিড় চিতা লেগে থাকে!!
তারও পর আপনি তার ওপর থেকে টেনে ফেলে দিলেন একটা গাছের শুকিয়ে যাওয়া শিকড়। শিকড়টা আলতো হয়ে থেকে গেল আপনার ইচ্ছায়, আপনি স্থির অবিচল রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়লেন। আপনার চোখ বন্ধ হল বটে, ভেতরে ভেতরে আর একটা চোখ খুলে গেল, আপনি গান গাইলেন না কিন্তু গলা সাধলেন, চোখের আরামে আপনি এখন বিশ্লেষণ করবেন আলোর ক্ষমতা। অক্ষমতা। এই অক্ষমতা পর্যন্ত পৌঁছতে আপনাকে একসময় ক্ষমতা জানতে হয়েছিল। আপনি সেই খাদে দাঁড়িয়ে ছিলেন যেখানে দাঁড়িয়ে থাকলেও আপনার মানসিক বিহ্বলতা বোঝা যায়, বোঝা যায় 'আপনি' শব্দটা এতক্ষন একটা ছোট কণা হিসেবে ভাবা হয়েছে, যা দিয়ে আমি লেখা আঁকা বলা শোনা কোনওটাই করতে চাইনি, বরং একটা ঘরে বসে ঘরের বাইরেটা কল্পনা করতে চেয়েছি। ধরতে চেয়েছি আমাকেই, যখন নিজেকে ভেঙে পাওয়া প্রত্যেকটা কণা আলাদা, সে যতই তাদের এক বলা হোক।
এক ও এগারো ১ দিয়ে তৈরী হলেও সংখ্যা পরিমাপ ইত্যাদি যাই বোঝানো হোক, তারা আলাদা এবং আলাদা থাকে ।। 




3 comments: