অসুস্থ মানুষকে ধর্ষক বলা যেতে পারে,
পুরুষ নয়
প্রতিটি ধর্ষণের পর আমরা হয়ে উঠি প্রতিবাদী। সকলে একে একে জেহাদ ঘোষণা করি ধর্ষকের বিরুদ্ধে। 'পুরুষতান্ত্রিক সমাজ' বলে উগরে ফেলি বিষবমি। কিন্তু আমরা কারা? মৌলবাদীদের হিন্দু-মুসলমান হয় না, ধর্ষকেরও নারী-পুরুষ হয় না। স্রেফ একটা ধারণার ক্রুশে নিজে আটকে রাখা। যেমন নারী ধর্ষণ হয়, তেমন পুরুষও ধর্ষণ হয়। দু-ক্ষেত্রেই অজস্র উদাহরণ রয়েছে।
ধর্ষণ, এক অসুস্থ কামনা। কাম প্রত্যেকটা নারী-পুরুষের থাকে। একে কন্ট্রোল করতে হয়। যারা পারে না তারা অসুস্থ, তারাই ধর্ষক। আজকের সমাজ কেন এই অসুস্থ মানুষগুলোকে 'পুরুষ', 'পুরুষ' বলে? কাম মানুষের অন্যতম রিপু। একে লালন করা আমাদের অন্যতম সাধনা, তবে লালন যদি লালসাতে পরিণত হয়, সেটা চরম দুর্যোগক্ষণ। এইক্ষণে, মানুষ তাঁর নিজ শবদেহ মাড়িয়ে যেতে পারবে না। নিজের পলাগলা দেহকে নিয়ে বসবে অস্তিত্ব ব্যাবসায়। অসুস্থ মানুষকে ধর্ষক বলা যেতে পারে, পুরুষ নয়।
প্রাইভেট বাসের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়- কেবিন ছাড়া একদিকে লেডিস আর একদিকে জেনারেল লেখা। অর্থাৎ, নারীর প্রাধান্য। সে লেডিস সিটেও বসবে জেনারেল সিটেও বসবে। কিছুদিন আগে কৈখালি যাচ্ছি, লেডিস সিট ফাঁকা; উল্টোভাঙা থেকে দু’জন তরুণ-তরুণী জেনারেল সিটে বসে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর এক বৃদ্ধ লোক ওঠে, ততক্ষণে সব জেনারেল ভর্তি। কিছু লেডিস সিট ফাঁকা রয়েছে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর উনি বসে পড়লেন। কিন্তু বাস বাগুইআটি যেতে না যেতে লেডিস সিটভর্তি হতে শুরু করে... ‘দাদা এটা লেডিস সিট, উঠুন’ বলে সদ্য ওঠা এক মধ্যবয়স্ক মহিলা ধমকাতে থাকে। লোকটি উঠলেন না। এরজন্য ‘বুড়ো ভাম, শখ মন্দ নয়’ অনেকিছুই শুনতে হল। কিন্তু ওই যে তরুণী লেডিস সিট ফাঁকা রেখেও জেনারেলে বসল? আসলে বৈষম্যটা ভিতরে। এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িতেও--- কেন লেডিস সিট? কেন লেডিস কামরা? কেন লেডিস লাইন?
হাজার হাজার ‘কেন’ নারী-পুরুষের মধ্যে দেওয়াল হয়ে ফুটে আছে। বাইরে থেকে আমরা তার গন্ধ নিই। কখনই ভাবি না, এই দেওয়াল ফাটিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে দিই সৌন্দর্যের শক্ত ইঁটগুলো। আমাদের গাঁথুনির মধ্যেই বিভেদের চৌচির রাস্তা, এই রাস্তাতে যে যার মতো হেঁটে যায়। কোনো গাছ নেই। ছায়া নেই। খা খা রোদ্দুর।
একজন শিক্ষক দ্বারা দশ-বারো বছরের ছাত্রী ধর্ষণ হচ্ছে, আবার একজন মধ্যবয়স্ক শিক্ষিকা দ্বারা একজন স্কুল পড়ুয়াও। কিন্তু নারী ধর্ষণের ঘটনা যতটা চোখে পড়ে, পুরুষ ধর্ষণের ঘটনা পারে না। এর কারণ, ওই যে আমরা নারী আমরা দুর্বল, তোমরা পুরুষ তোমরা শক্তিমান-এই চিন্তাভাবনা।
অনেক পুরুষই ধর্ষণ হয়, কিন্তু বলতে পারে না। আলোচিত হয় না। কীভাবে বলবে 'আমি একজন পুরুষ, কিন্তু আমাকে নারী, সমাজের দুর্বলতম শ্রেণী ধর্ষণ করেছ'। একটা দীর্ঘদিনের কনসেপ্ট তার ভিতর সেট হয়ে আছে।
একবার ইন্টারনেটেই সম্ভবত পড়েছিলাম, সিডনিতে রাতে জনহীন
রাস্তায় ফিরছিল এক কিশোর। পিছনে গাড়িতে আসা এক গ্রুপ মেয়ে, ছেলেটির গলায় ছুরি ধরে
এক পার্কে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। ছেলেটি পুলিশের দ্বারস্থও হয়। এরপর কী হয়েছে জানা
নেই। সংবাদপত্রের অধিকাংশ খবরই আমাদের সামনে শো-আপ। গুটিকত খবর ছাড়া কোনো ঘটনার
ইতি পাওয়া যায় না।
ইচ্ছার বিরুদ্ধে নারী-পুরুষের মিলনকে ধর্ষণ বলা হয়। এই সংজ্ঞানুয়ারী, শোবার ঘরেও অজস্র ধর্ষণ হয়। নারী পুরুষকে করে, পুরুষ নারীকে করে। কিন্তু এই পরিসংখ্যানও পাওয়া যায় না। আমরা বাইরের পৃথিবীকে আঁকড়ে ধরে ক্যালকুলেশনে বসি। নিজেই হয়ে উঠি সেই অঙ্ক মাস্টার যাঁর হাতে লালকালির পেনের পরিবর্তে লেগে থাকে লাল রক্ত।
মানুষের চিন্তাভাবনা অনেক পাল্টিয়েছে। নারীশিক্ষার হারও বেড়েছে। মেয়েরা এখন অনেক সাবলম্বী। কলেজ, ইউনিভার্সিটি যায়। অফিসে চাকরি করে। নারীদের পক্ষে নানা আইন, সরকারী প্রকল্প চালু হয়েছে। এলাকায় এলাকায় গড়ে উঠেছে মহিলা কমিশন। বর্তমান পরিসংখ্যানে দেখে গেছে- পুরুষ নির্যাতনের শতকরা পার্সেন্টেজ আগের থেকে অনেকটা বেড়েছে। তবে এটা নয় যে নারী নির্যাতন বা ধর্ষণ হচ্ছে না।
শুধু এটাই বলা, আজ যখন সভ্যতা উন্নতির পথে পা বাড়িয়েছে, তখন 'ধর্ষণ' একটা পুরুষ সংক্রামিত রোগ বলে ট্রল কেন? ধর্ষণের প্রতিকার কীভাবে হবে সেটার পদক্ষেপ রাষ্ট্র নিতে পারে, কিন্তু আমাদের কি সম্ভব ইস্পাতের যোনি নিয়ে ঘুরে বেড়ানো?
চিত্রঋণ
ইন্টারনেট
বেড়ে লিখেছিস।ব্র্যাভো
ReplyDelete